আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বগুড়া জেলার ইতিহাস। বগুড়াকে বলা হয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের শহর। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী ও প্রবেশদ্বারও বলা হয়ে থাকে। বগুড়া তার ইতিহাস আর ঐতিহ্যে এতটাই সমৃদ্ধ যে, ২০১৬ সালে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল বগুড়ার মহাস্থানগড়।
বগুড়া জেলার ইতিহাস
উত্তরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত পুণ্ড্রনগর খ্যাত বগুড়ার নামকরণের ইতিহাস নিয়ে নানান কাহিনী প্রচলিত রয়েছে । বঙ্গদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্থানিক নাম ছিল ‘বগ্ড়ী’। সেটা রাজা বল্লাল সেনের আমল। সেই আমলে বঙ্গদেশকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। বঙ্গ, বরেন্দ্র, মিথিলা, বাঢ় ও বগ্ড়ী। শেষোক্ত ‘বগ্ড়ী’ অংশে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী ‘বাগিদ’দের সংখ্যাগুরুত্ব ও অধিক শক্তিমত্তা ছিল। এই বাগদি শব্দটিই অপভ্রংশ ‘বগ্ড়ী’ রূপ ধারণ করতে পারে। কালে রূপান্তরিত এই ‘বগ্ড়ী’ই ‘বগুড়া’ উচ্চারণে স্থির হয়েছে বলে একটি ধারণা রয়েছে। তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ বগুড়ার অবস্থান বঙ্গদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে নয়।
বগুড়া – নামটি শুনলেই প্রথমে মনে আসে লোভনীয় দই-মিষ্টির কথা। তবে এটাই বগুড়ার মূল পরিচয় নয়। বগুড়াকে বলা হয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের শহর। বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা। আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম জেলা এবং জনসংখ্যার দিক থেকে পঞ্চম বৃহত্তম জেলা। খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ । এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ ।
১৩শ শতাব্দীতে, এলাকাটি মুসলিম শাসনের অধীনে আসে। মুসলিম শাসক নাসিরুদ্দিন বগরা খান ১২৭৯ থেকে ১২৮২ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর ছিলেন। তার মৃত্যুর পর, তার নামে এলাকাটির নামকরণ করা হয় এবং তখন থেকেই এটি বগুড়া নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ গড়ে উঠেছিল এই বগুড়ায়। প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধনের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়, যা বগুড়া জেলায় অবস্থিত এবং এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে পরিচিত। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ও রাজধানী বলা হয়। এছাড়াও বগুড়া শিক্ষানগরী নামে পরিচিত ৷ বগুড়া পৌরসভা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা। বর্তমানে বগুড়া সার্ক এর সংস্কৃতি রাজধানী। ৷
খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ । এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ ।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১,২৭৯ থেকে ১,২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছিল বগড়া। ইংরেজি উচ্চারন ‘বগড়া’ হলেও বাংলায় কালের বিবতর্নে নামটি পরিবর্তিত হয়ে ‘বগুড়া’ শব্দে পরিচিতি পেয়েছে। ২ এপ্রিল ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বগুড়ার ইংরেজি নাম Bogura করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে বগুড়া বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। বাংলার একজন স্বাধীন সুলতান (১২৮৭–১২৯১) নাসিরউদ্দিন বুগরা খানের নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ গড়ে উঠেছিল এই বগুড়ায়।
প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধনের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়, যা বগুড়া জেলায় অবস্থিত এবং এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে পরিচিত। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ও রাজধানী বলা হয়। এছাড়াও বগুড়া শিক্ষানগরী নামে পরিচিত৷ বগুড়া পৌরসভা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা। বর্তমানে বগুড়া সার্ক এর সংস্কৃতি রাজধানী।

৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং ২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর উপজেলা অবস্থিত।
বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট, উত্তর পশ্চিমে জয়পুরহাটের অংশবিশেষ,পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে নওগাঁ, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জের অংশবিশেষ এবং দক্ষিণ পূর্বে সিরাজগঞ্জের অবশিষ্ট অংশ বিদ্যমান। বগুড়ার পূর্বে জামালপুর থাকলেও এর স্থলভাগ সংযুক্তভাবে অবস্থিত নয়।
বগুড়া ভৌগোলিকভাবে ভূমিকম্পের বিপজ্জনক বলয়ে অবস্থিত। তাছাড়া বগুড়া জেলা বরেন্দ্রভূমির অংশবিশেষ যা ধূসর ও লাল বর্ণের মাটির পরিচিতির জন্য উল্লেখ্য।

বগুড়া জেলা ১২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত যথাক্রমে, ১। কাহালু , ২। বগুড়া সদর, ৩। সারিয়াকান্দি, ৪। শাজাহানপুর, ৫। দুপচাচিঁয়া, ৬। আদমদিঘি, ৭। নন্দিগ্রাম, ৮। সোনাতলা, ৯। ধুনট, ১০। গাবতলী, ১১। শেরপুর, ১২। শিবগঞ্জ।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থানঃ
➤মহাস্থানগড় ➤গোকুল মেধ (বেহুলার বাসরঘড়) ➤ভাসু বিহার ➤শিলাদেবীর ঘাট ➤গোবিন্দ ভিটা ➤রাজা পরশুরামের বাড়ি ➤জীয়ত কুণ্ড ➤শাহ সুলতান বলখি (রহ.) এর মাজার ➤মহাস্থানগড় যাদুঘর ➤যোগীর ভবণ ➤বিহার ভীমের জাঙ্গাল ➤খেরুয়া মসজিদ ➤নবাব বাড়ি (সাবেক নীল কুঠির) ➤বিজয়াঙ্গন যাদুঘর, বগুড়া সেনানিবাস, শাজাহানপুর (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক) ➤শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম ➤পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, শেরপুর, ➤বাংলাদেশ মশলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, ➤মম-ইন (Momo Inn), ঠেঙ্গামারা ➤হোটেল নাজ গার্ডেন, ছিলিমপুর ➤পর্যটন মোটেল, বনানী ➤মম-ইন ইকো পার্ক, ঠেঙ্গামারা।
আরও পড়ুনঃ