বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান। বগুড়া তার ইতিহাস আর ঐতিহ্যে এতটাই সমৃদ্ধ যে, ২০১৬ সালে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল বগুড়ার মহাস্থানগড়। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে ‘সার্ক কালচারাল সেন্টার’ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কোনো একটি দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলকে সার্কের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় মহাস্থানগড় এই স্বীকৃতি অর্জন করে।

বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান

 

বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান
গোকুল মেধ – বগুড়া জেলা

 

# শিরোনাম স্থান কিভাবে যাওয়া যায় যোগাযোগ
ঐতিহাসিক যোগীর ভবনের মন্দির পাইকড়র ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পূর্বপার্শ্বে বগুড়া কেন্দ্রীয় বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে দররগাহাট বাজার সেখান থেকে রিক্সা বা সিএনজি যোগে পাইকড়র ইউনিয়ন পরিষদ 0
জয়পীরের মাজার, দুপচাঁচিয়া জিয়ানগর উপজেলা সদর হতে পশ্চিম দিকে আক্কেলপুর যাোয়ার রাস্তায় ৫ কি: মি:যেতে হবে 0
দেওতা খানকাহ্ মাজার শরিফ,নন্দীগ্রাম নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের দেওতা গ্রামে অবস্থিত। বগুড়া জেলা থেকে ৩৯ কিমিঃ দুরে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের দেওতা গ্রামে অবস্হিত । 0
পাঁচপীর মাজার কাহালু দূর্গাপুর ইউনিয়নের কাহালু-তালোড়া রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে বগুড়া সাতমাথা হতে সিএনজি যোগে পাঁচপীর মাজার বা বগুড়া হতে ট্রেনযোগে পাঁচপীর ষ্টেশন হয়ে ২০০ মিটার পশ্চিমে পাঁচপীর মাজার। 0
বাবুর পুকুর গণকবর, শাজাহানপুর পারতেখুর, খরনা বগুড়া শহর থেকে নাটোর রোড এ ১০ কিঃমিঃযেতে হয় বাস বা সি এন জি অটোরিক্সাতে সময় লাগে ৩৫ মিনিট। 0
বেহুলা লক্ষিনদর (গোকুল মেধ) বগুড়া সদর উপজেলা বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখে যানবাহন যোগে যাওয়া যায় 0
মহাস্থানগড় বগুড়াশহর হতে ১৫ কিঃমিঃ দূরেপুন্ড্রবর্ধনের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু ছিল এইমহাস্থানগড়। বর্তমানে এলাকাটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত। বগুড়া সাতমাথা হতে সিএনজি যোগে ১৫ কিমি উত্তরে। 0
সান্তাহার সাইলো সান্তাহার রেলস্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বগুড়া রেল স্টেশন হতে ট্রেনযোগে সান্তাহার জংশনে পৌছে ৩ কি:মি:রাস্তা রিক্সা অথবা টেম্পুযোগে যাওয়া যায়। 0
সারিয়াকান্দির পানি বন্দর যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ হতে রিক্সা যোগে কালীতলা গ্রোয়েন বাধ সংলগ্ন যমুনা নদীর ঘাটে যেতে হয়। 0
google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

আরও কিছু দর্শনীয় স্থান:

  • ভাসু বিহার
  • শীলাদেবীর ঘাট
  • গোবিন্দভিটা
  • রাজা পরশুরামের বাড়ি
  • জীয়ত কুণ্ড
  • শাহ সুলতান বলখি (রহ.) এর মাজার
  • মহাস্থানগড় যাদুঘর
  • ‍‍‌ বিহার
  • ভীমের জাঙ্গাল
  • খেরুয়া মসজিদ
  • নবাব বাড়ি (সাবেক নীল কুঠির)
  • বিজয়াঙ্গন যাদুঘর, বগুড়া সেনানিবাস, শাজাহানপুর (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক)
  • শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম,পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, শেরপুর,
  • বাংলাদেশ মশলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ
  • মম-ইন (Momo Inn), ঠেঙ্গামারা, বগুড়া সদর
  • হোটেল নাজ গার্ডেন, ছিলিমপুর, বগুড়া সদর
  • পর্যটন মোটেল, বনানী, বগুড়া সদর
  • ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক, বগুড়া সদর
  • মম-ইন ইকো পার্ক, ঠেঙ্গামারা, বগুড়া সদর
  • রানার প্লাজা (শপিংমল), বগুড়া সদর।

 

বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান
মহাস্থানগড় – বগুড়া জেলা

 

কিছু দর্শনীয় স্থানের বিবরণ:

 

শাহ সুলতান বলখির মাজার

মহাস্থানগড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ারের মাজার। কথিত আছে এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশ থেকে মাছের পিঠে চড়ে এখানে এসেছিলেন তিনি। ১২০৫-১২২০ খ্রিষ্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।

 

গোকুল মেধ বা বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর

গোকুল মেধ বগুড়া সদরের গোকুল গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি মূলত ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেবপাল কর্তৃক নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। মূল স্তূপের পশ্চিমার্ধে প্রচলিত বাসর ঘরের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এ কারণে অনেকের কাছে এটি ‘বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর’ হিসাবেও পরিচিত। এ ছাড়া একে ‘লখিন্দরের মেধ’ নামেও চেনেন অনেকে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অবস্থান মহাস্থানগড় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে।

 

মহাস্থানগড় জাদুঘর

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৬৭ সালে করতোয়া নদীর তীরে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি জাদুঘর। পরবর্তী সময়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেটি দেখাশোনার উদ্যোগ নেয়। সেখানে আছে পুরোনো মাটির মূর্তি, বাসনপত্র, স্বর্ণবস্তু, ব্রোঞ্জের সামগ্রী, কালো পাথরের মূর্তি, বেলে পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন শিলালিপি, মাটি, মূল্যবান পাথর, মার্বেল, পোড়া মাটির পুতুল, নানা ধরনের প্রাচীন অলংকারসহ প্রাচীন ও মূল্যবান নিদর্শন।

 

মানকালীর কুণ্ড

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার এক অন্যতম নিদর্শন মানকালীর কুণ্ড। ষাটের দশকের শুরুর দিকে তৎকালীন পাকিস্তান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মহাস্থানগড়ের উঁচু ঢিলার ওপর বিদ্যমান এই নিদর্শনকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে নথিভুক্ত করে। মহাস্থানগড়ের মজা পুকুরের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত মানকালী কুণ্ড ঢিবিতে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে ছোট্ট একটি জলাশয়। এই জলাশয়কে ‘কুণ্ড বা কূপ’ বলা হয়। জলাশয় ও ঢিবিকে একত্রে মানকালীর কুণ্ড নামকরণ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই স্থানে সর্বপ্রথম রাজা মানসিংহ ও তার ভাই তানসিংহ একটি মন্দির নির্মাণ করেন, পরবর্তীকালে ঘোড়াঘাটের জমিদাররা এখানে মসজিদ নির্মাণ করেন।

 

জিয়ৎ কুণ্ড

এটি মহাস্থানগড়ে অবস্থিত একটি কূপ ও অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। লোককাহিনি অনুসারে, এই কূপের পানিতে ছিল অলৌকিক ক্ষমতা। যা পান করলে নাকি মৃত ব্যক্তিও জীবিত হয়ে যেতেন! কথিত আছে, রাজা পরশুরাম যখন শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ারের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তখন রাজা পরশুরাম তার সৈন্যদের এই কূপের পানির মাধ্যমে আবার জীবিত করতেন। শাহ সুলতান বলখি এ বিষয়টি জানার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। পরবর্তীকালে নাকি একটি কাক এক টুকরা মাংস মুখে নিয়ে যাওয়ার পথে সেটি কূপে পড়ে যায়। তারপর থেকে কূপটির পানির অলৌকিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

 

খেরুয়া মসজিদ

বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত। ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল খেরুয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে মসজিদের নামকরণ নিয়ে সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। প্রায় ৪৩০ বছর পুরোনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদটি চওড়া দেয়াল এবং মিনারের ভিতের কারণে আজও টিকে রয়েছে। চুন-সুরকির ব্যবহারে তৈরি এই মসজিদের পূর্বদিকের দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। আর পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি কারুকার্যখচিত মেহরাব। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে এখনো নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় হয় এবং খেরুয়া মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত রয়েছে।

 

​পরশুরাম প্যালেস

এটি মহাস্থানগড়ে যেসব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে তার অন্যতম। এটি পরশুরাম প্যালেস নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়, এখানে অষ্টক শতক বা পাল আমলের নির্মিত ইমারতের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।

 

শিলাদেবীর ঘাট

এটি মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ২০০ মিটার পূর্বে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। লোককাহিনি অনুযায়ী, শীলাদেবী ছিলেন রাজা পরশুরামের বোন। শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ার, রাজা পরশুরামকে পরাজিত করার পর শীলাদেবী এই স্থানে জলে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমীতে এই স্থানে স্নান করে থাকেন।

 

ভাসু বিহার

মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার অদূরে এটি অবস্থিত। এটি ‘নরপতির ধাপ’ হিসেবেও বেশ পরিচিত ও অন্যতম প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন। ধারণা করা হয়, এটি একটি বৌদ্ধ সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ এবং বৌদ্ধদের ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

 

সারিয়াকান্দী কালিতলা ঘাট

দেশের অন্যতম বৃহৎ নদী যমুনা বহমান বগুড়ার সারিয়াকান্দী উপজেলার মধ্য দিয়ে। এ নদী ভাঙনপ্রবণ বলে কয়েকটি গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যে গ্রোয়েন বাঁধগুলো দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এই বাঁধের অবস্থান। সৌন্দর্যপিপাসুরা প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসেন এবং নৌকা নিয়ে নদী ও চরাঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন। শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশায় ৪০-৪৫ মিনিটে সহজেই যাওয়া যায় এখানে।

বগুড়ায় যেসব অসাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে, সেগুলোর অবস্থান কিন্তু প্রায় কাছাকাছি। তাই যে কেউ চাইলেই মোটামুটি দুই দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করলেই এই স্পটগুলো ঘুরে আসতে পারেন সহজেই। এ ছাড়া মনোমুগ্ধকর যমুনার তীর তো আছেই।

যেভাবে যাবেন বগুড়া

ঢাকাসহ দেশের যেকোনো জায়গা থেকে বাস অথবা ট্রেনে চড়ে যেতে পারেন বগুড়া। এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, মানিক এক্সপ্রেস, শাহ ফতেহ আলী পরিবহন, একতা পরিবহন, ডিপজল এক্সপ্রেস ইত্যাদি বাসে বগুড়া পৌঁছাতে পারেন। ট্রেনের ক্ষেত্রে ঢাকা-বগুড়া রুটের ‘লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ও বংপুর এক্সপ্রেস আন্তঃনগর’ ট্রেনেও যেতে পারেন।

বগুড়ায় থাকা-খাওয়া

বগুড়ায় তারকা মানের হোটেল মম ইন, হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, নর্থওয়ে মোটেলসহ আরো বিভিন্ন হোটেল আছে। যেকোনো একটিতে থাকতে পারেন। এ ছাড়া খাবারের জন্য বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত হোটেল আকবরিয়া, শ্যামলী, সেলিম হোটেলসহ নানা মানের হোটেল পাবেন। তা ছাড়া জলশ্বরীতলা মোড়ে বাহারি হরেক রকম খাবারের অসংখ্য দোকান।

 

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment