বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত। এখানে আমরা জানাচ্ছি বগুড়া বলতেই কিসের নাম আপনার মনে আসে। তবে বগুড়া অনেক কিছুর জন্যই বিখ্যাত। সেই তালিকাটি পাবেন আমাদের “বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান” নামের আর্টিকেলটিতে, নিচে যার লিংক দেয়া হয়েছে।

বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

বগুড়া দইয়ের জন্য খুব বিখ্যাত। বগুড়া শহরে থেকে ১১ কি.মি. উত্তরে মহাস্থানগড় অবস্থিত, যা একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এবং সেসময় পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল।

 

বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
মহাস্থানগড় যাদুঘর – বগুড়া জেলা

 

বগুড়ার দই:

বগুড়ার দই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বগুড়া জেলার বিখ্যাত মিষ্টান্ন। ২০২৩ সালে বগুড়ার সরার দই ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। দধি বা দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। সারা বাংলাদেশে দই পাওয়া গেলেও স্বাদে ও গুণে অতুলনীয় হওয়ায় বগুড়ার দই দেশ ও দেশের বাইরে খুব জনপ্রিয়। এর খ্যাতি মূলত ব্রিটিশ আমল থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। ষাটের দশকের প্রথম ভাগে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকেও গিয়েছে বগুড়ার দই। পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠিয়েছিলেন এই দই।

বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস শুরু হয় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা থেকে। স্থানীয়দের মতে সনাতন ঘোষ সম্প্রদায় দই তৈরি করে বগুড়াকে দেশের সর্বত্র পরিচিত করে তুলেছিল। পরবর্তীতে ঘোষদের হাত ধরে ধীরে ধীরে এটি চলে গেছে মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের অধীনেে।

জানা যায় বগুড়ার শেরপুরে প্রথম দই তৈরি হয় প্রায় আড়াইশ বছর আগে। তৎকালীন বগুড়ার শেরপুরের ঘোষ পরিবারের ঘেটু ঘোষ প্রথম দই তৈরি আরম্ভ করেন। টক দই তৈরি থেকে বংশ পরম্পরায় তা চিনিপাতা বা মিষ্টি দইয়ে রূপান্তরিত হয়। আর কালের বিবর্তনে স্বাদের বৈচিত্র্যের কারণে দইয়ের বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয়। টক দই দিয়ে মেজবানের রান্না ও ঘোল তৈরি হয়। অতিথি আপ্যায়নে চলে মিষ্টি দই।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পুন্ড্রনগর:

পৌন্ড্রভুক্তির পুন্ড্রনগর ছিল পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর, যা বর্তমানে বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত মহাস্থানের বর্তমান স্থান দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ১২ পর্যন্ত একটি প্রাণবন্ত প্রশাসনিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল যা মৌর্য সাম্রাজ্যের সময় থেকে সেন রাজবংশের সময় পর্যন্ত।

প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ এবং সাহিত্যের বর্ণনা সত্যিই একটি পরিকল্পিত ও মহৎ শহরের কথা বলে। শহরের দেয়াল, বিস্তৃত গেট, প্রাসাদ, সাধারণ বাসস্থান, সমাবেশ হল, মন্দির, বিহার, দোকান, পুকুর এবং এমনকি শহরতলির মন্দির ও বিহারগুলি শহরের বৈশিষ্ট্যযুক্ত; চীনা তীর্থযাত্রী জুয়ানজাং (হিউয়েন সাং) খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে পরিদর্শন করেন, বিশেষ করে পুকুর, বাগান, ফুল ও আনন্দ উদ্যানের উল্লেখ করেছেন।

 

বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
গোকুল মেধ – বগুড়া জেলা

 

অন্য যে সব কারনে বগুড়া জেলা বিখ্যাতঃ

বগুড়ার ইতিহাসঃ

বগুড়া বাংলাদেশের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি, যার ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মহান সম্রাট অশোকের রাজত্বকালের। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন এবং মুঘল সহ বহু শতাব্দী ধরে এই জেলাটি বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে।

বগুড়ার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানঃ

বগুড়া মহাস্থানগড় সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের আবাসস্থল, যেটি একসময় প্রাচীন বাংলার অন্যতম প্রধান রাজ্য পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল। মহাস্থানগড় ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।

বগুড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ

বগুড়া একটি উর্বর সমভূমিতে অবস্থিত এবং পাহাড় ও বনে ঘেরা। মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, দুধকুমার নদী এবং মহাস্থানগড় পাহাড় সহ এই জেলাটি অনেক সুন্দর প্রাকৃতিক আকর্ষণের আবাসস্থল।

বগুড়ার সংস্কৃতিঃ

বগুড়া একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির আবাসস্থল। এই জেলাটি বাঙালি, আদিবাসী এবং মুসলমান সহ বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর লোকদের বাসস্থান। বগুড়া জাদুঘর এবং বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তন সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল। কিছু বিখ্যাত উৎসবের মধ্যে রয়েছে:

পোড়াদহ মেলাঃ

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মেলার মধ্যে পোড়াদহ মেলা উল্লেখযোগ্য। বগুড়া শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এ মেলা হয়ে আসছে। পোড়াদহ নামক স্থানে মেলা বসে তাই নাম হয়েছে পোড়াদহ মেলা। কথিত আছে, প্রায় সাড়ে চারশত বছর পূর্বে থেকে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষ্যে এই মেলা হয়ে আসছে। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবারে এই মেলা হয়ে আসছে।

মেলার প্রধান আকর্ষণ বড় মাছ আর বড় মিষ্টি। এছাড়াও থাকে নারীদের প্রসাধনী, ছোটদের খেলনা, কাঠ ও স্টিলের আসবাব ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। মেলা প্রধানত একদিনের হলেও উৎসব চলে তিনদিন ব্যাপী। বুধবার মূল মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার একই স্থানে এবং একই সাথে আশেপাশের গ্রামে গ্রামে চলে বউ মেলা। যেহেতু অনেক মেয়েরা মূল মেলায় ভিড়ের কারণে যেতে পারে না তাই তাদের জন্যই এই বিশেষ আয়োজন। বউ মেলায় শুধু মেয়েরা প্রবেশ করতে পারে এবং কেনাকাটা করতে পারে।

কেল্লাপোষী মেলাঃ

বগুড়ার শেরপুরে ৪৫৭ বছর পূর্ব থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। মেলার তারিখ প্রতিবছর জৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার।

 

বগুড়ার অর্থনীতিঃ

বগুড়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। জেলায় কৃষি, উৎপাদন, এবং পর্যটন সহ অনেক শিল্পের আবাসস্থল। বগুড়া একটি প্রধান পরিবহন কেন্দ্র এবং বগুড়া বিমানবন্দর এবং বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের আবাসস্থল।

 

আরও পড়ুনঃ

আমাদের অন্য জেলার বিখ্যাত বিষয়গুলো নিয়ে আয়োজন দেখুন:

Leave a Comment